অনিয়মের অভিযোগে বিসিবেতে দুদকের তৎপরতা শুরু

- আপডেট সময় : ১০:৫২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
- / ৪০ বার পড়া হয়েছে
ক্রিকেট বোর্ডের অনিয়ম নিয়ে রাজ্যের আলোচনা। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় একচ্ছত্র দাপুট খাটিয়ে নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেট বোর্ডের অপ্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠেন। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভিবাবক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কিংবা ক্রীড়ামন্ত্রণালয় ছিলো তার ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। অভিযোগ রয়েছে দেশের এক ব্যক্তিকে খুশি রেখে নাজমুল হাসান পাপন ক্রিকেট বোর্ডকে বানিয়েছেন দূর্নীতির স্বর্গরাজ্য। যা কিনা চলতি বিপিএলের আয়-ব্যয়ের হিসাবের গড়মিল থেকেই বেরিয়ে আসছে অনিয়মের সকল তথ্য।
বিপিএলের এগারতম আসরের আয় নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে রীতিমতো হৈচৈ পড় যায়। গত দশটি আসর মিলে যে পরিমান অর্থ আয় করেছে বিসিবি অন্তর্বর্তী সরকারের মাত্র কয়েক মাসের প্রস্তুতিতে তার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে। বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশিত হতেই টনক নড়েছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিসিবি’র অনিয়মের অভিযোগ পড়েছে দুদকে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মাঠেও নেমে পড়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিসিবির মিরপুরস্থ্য কার্যালয়ে দুদক অভিযান চালায়। সেখানে তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে বিসিবির কাছে তথ্যাদি জানতে চায় দুদকের প্রতিনিধি দল।
বিসিবি আয়োজিত মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপনের খরচের হিসাব, তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত বিপিএলের টিকিট বিক্রির হিসাব ও তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ফির অনিয়ম। আপাতত এই তিনটির দিয়ে দুদকের তদন্দেত কর্মকান্ড শুরু হয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেছেন, এই তিনটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা বিসিবির কাছে তথ্যাদি জানতে চেয়েছেন।
২০২০-২১ সালে মুজিবশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী সরকারি নানান আয়োজন ছিলো। এর অংশ হিসেবে বিসিবিও জাকজমকপূর্ণ কনসার্টসহ বর্ণিল আয়োজন করে। এই আয়োজনে ব্যয়ের হিসেব গড়মিলের তথ্যের কথা বলেন দুদকের কর্মকর্তা, ‘মুজিব শতবর্ষের ব্যয়ের হিসেবে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাইবাছাই করে আমরা আমাদের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে প্রতিবেদন দাখিল করব। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’
‘কনসার্টসহ যে আয়োজন হয়েছিল, সেখানে সব মিলিয়ে ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। আমরা এই অভিযোগ পেয়েছি। তবে আসলে খরচ হয়েছে ৭ কোটি টাকার মতো। এখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকা সরানো হয়েছে বা কিছু হয়েছে। এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি।’
এ ব্যাপারে বিসিবির ফাইন্যান্স বিভাগের কাছে তথ্যাদি চেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া টিকিট বিক্রি থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলেও জেনেছে দুদক, যেটার হিসাব দেখানো হয়নি। সেটিসহ ২০ কোটি টাকার বেশি গরমিলের সন্দেহ করা হচ্ছে।
বিপিএলের টিকিট বিক্রির আয়েও গরমিলের অভিযোগ পেয়েছে দুদক এবং প্রাথমিকভাবে এখানে তারাও অসংগতি দেখতে পেয়েছে বলে জানিয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীকে দুদক কর্মকর্তারা জানান, বিপিএলের ১১তম আসরেই যেখানে ১৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেখানে তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত মোট আট মৌসুমে টিকিট বিক্রি থেকে মোট আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা। দুদক কর্মকর্তারা বলেন, বিসিবির কাছ থেকে তাঁরা তথ্য পেয়েছেন, আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বিসিবি চুক্তি করত এবং ওই চুক্তি অনুযায়ী টিকিট বিক্রি করা হত। টিকিট বিক্রি থেকে নির্দিষ্ট একটা অঙ্ক বিসিবিকে দেয়া হত, যেটা তাদের আয় হিসাবে ধরা হতো।
সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান দায়িত্বে থাকার সময় তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ৫০ হাজার থেকে একলাফে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এতে প্রতিযোগিতা থেকে সরে যায় প্রায় সব দলই। প্রতিবছর দুটি করে দল উচ্চ এন্ট্রি ফি দিয়ে নামমাত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এ নিয়েও অভিযোগের তদন্ত করবে দুদক।
দুদক কর্মকর্তারা বলেন, এন্ট্রি ফি বাড়িয়ে দেওয়ায় গত কয়েক বছরে এ প্রতিযোগিতায় ২-৩-৪টি করে দল অংশ নিত। এবার এন্ট্রি ফি কমিয়ে ১ লাখ টাকা করায় ৬০টি দল অংশ নিতে পেরেছে। তাঁদের মনে হয়েছে, আগে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা না থাকায় বা কোনো ধরনের চাপ থাকাতেই দলগুলো আসেনি। এখানে কোনো অসংগতি থাকলে সেটিও যাচাই করে দেখবে দুদক।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের সহকারী পরিচালক বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁরা বিসিবির কাছে ওই তিনটি বিষয়ে তথ্যাদি চেয়েছেন। এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তাঁরা কিছু বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চেয়েছেন। আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে বলেছি তাঁদের সহযোগিতা করার জন্য।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যানেজমেন্ট টিম বিসিবির পরিচালনা পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি এবং বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করি। আমাদের কাজ হচ্ছে বোর্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা।’