বৈশাখ বরণে প্রস্তুত বাঙালী

- আপডেট সময় : ১২:৫৮:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
- / ৪৭ বার পড়া হয়েছে
রাত পোহালেই বাংলা নতুন বছর। অতীত ব্যর্থতা মুছে নতুনকে বরণে বাঙালীতে নানা আয়োজন। চৈত্রের খরতাপ কাটিয়ে স্বস্তির পরশ পেতে প্রকৃতির কাছে নানা আকুতি। সংস্কৃতিমনাদের বিশ্বাস তাদের এই আকুতিতে ধরণীতের নেমে আসবে এক ফসলা বৃষ্টি। এটি বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্য।
সম্রাট আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় বাংলা গণণা পদ্ধতি শুরু হয়। ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দের ১০ মার্চ বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন গণণা শুরু হয়। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে “বঙ্গাব্দ” বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। মূলত আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়।ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার নানা আয়োজন। পাওনাদারদের হালখাতা। মিষ্টি বিতরণ,আরও কতো না কি।
সময় পেরিয়ে বাংলা নববর্ষে পড়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সাম্প্রতিক দু:খ্য, ব্যদনার স্মৃতি বিজোড়িত ঘটনাবলী এখন প্রকাশ পায় নববর্ষ উদযাপনে। গ্রামের এই উৎসব এখন শহরে অনুষ্ঠিত হয় ব্যাপকভাবে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে, সবাইকে নিয়ে পয়লা বৈশাখের আনন্দ ভাগাভাগির উৎসবের কেন্দ্রে থাকে ছায়ানটের রমনা বটমূলে বর্ষবরণ সংগীত ও মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছায়ানটের যাত্রা, বাংলার মানুষকে সাংস্কৃৃতিক মুক্তিতে অনুপ্রেরণা যোগায়।
ইংরেজি ১৯৬৪ সাল, বাংলা ১৩৭১ সনের ১ বৈশাখ রমনার বটমূলে ছায়ানট বাংলা নববর্ষ পালন শুরু করে। কালক্রমে এ নববর্ষ পালন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়ে। ছায়ানটের বর্ষবরণ গানে বাংলা নতুন বছরকে আহ্বানের মধ্যদিয়ে এখন নববর্ষের দিন শুরু করে নগরবাসী।
বর্তমানে নববর্ষ উদযাপন ব্যাপকতা লাভ করেছে। এই দিবসটি পালনে সরকার থেকেও নেয়া হয় উদ্যোগ। তারই অংশ হিসেবে জেলখানায় হাজতিদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ঐতিহ্য পান্তাভাত আর ইলিশ ভাজার স্বাদ বিশ্ব পরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, পহেলা বৈশাখ-১৪৩২ উপলক্ষে ঢাকা বিভাগের কারাগারগুলোতে বন্দি ও স্টাফদের জন্য দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সকালে বন্দিদের মধ্যে দেশীয় ঐতিহ্যবাহী নাস্তা হিসেবে পান্তা, ইলিশ ও বিভিন্ন ভর্তা।
দুপুরে থাকবে বিশেষ খাবার। বিকেলে বন্দিদের অংশগ্রহণে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাতে বিশেষ খাবার সরবরাহ করা হবে। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় কেরানীগঞ্জ কারাগারে আরপি গেটে বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনকে ওয়েলকাম ড্রিংকস, বৈশাখী হাত পাখা বিতরণ, বাচ্চাদের মধ্যে চরকি ও বৈশাখী ক্যাপ, বেলুন ও ভুভুজেলা বিতরণ করা হবে।
কারাগারে কর্মরত স্টাফ ও তাদের পরিবার পরিজনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সকাল ৯টায় আবাসিক এলাকার মাঠ থেকে বৈশাখী র্যালি শুরু হবে। র্যালিটি কারাগারের সামনে থেকে আরপি গেট প্রদক্ষিণ করে শেডের সামনে দিয়ে কারারক্ষী ব্যারাক হয়ে আবাসিক এলাকার মাঠে গিয়ে শেষ হবে।
র্যালির সিকোয়েন্স যথাক্রমে ব্যানার পার্টি, কুলা পার্টি, গ্রামীণ ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ পার্টি, ব্যান্ড পার্টি, ঘোড়ার গাড়ি, শাড়ি পার্টি ও পাঞ্জাবি পার্টি থাকবে।সকাল সাড়ে ৯টায় র্যালি শেষে সব স্টাফের পরিবারসহ আবাসিক এলাকার মাঠের প্যান্ডেলে পান্তা-ইলিশ খাবেন। এরপর প্রধান ফটকের সম্মুখে কারারক্ষীদের অংশগ্রহণে থাকবে দেশীয় ঐতিহ্যের ডিসপ্লে। দুপুরে শুধুমাত্র স্টাফদের জন্য থাকবে উন্নতমানের খাবার বিতরণ।
সন্ধ্যায় আবাসিক এলাকার মাঠে বৈশাখী আমেজে ফারজানা বিথীর উপস্থাপনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান আকর্ষণ শিল্পী কোনাল ও লুইপা। এছাড়া থাকছে আকর্ষণীয় র্যফেল ড্র। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ঢাকা বিভাগের মোট ১৭ কারাগার ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবিরের তত্ত্বাবধানে।
আওতাভুক্ত কারাগারগুলোর মধ্যে রয়েছে— ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুরে চারটি কেন্দ্রীয় কারাগার, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, দেশের সব কারাগারেই পহেলা বৈশাখ উৎসবে মেতে থাকবেন বন্দিরা। খাবেন উন্নত মানের খাবার।
এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও এই দিনটিকে নানা আয়োজনে বরণ করছে। জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।