ঢাকা ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় আসা যায় কিন্তু সেটা কখনো থাকেনি বললেন মান্না

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৯:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৫০ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফেসবুক ওপেন করতেই বিভিন্ন আইডি থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সীমা নির্ধারণ নিয়ে নানা মতামত দেখা যায়। সবার প্রত্যাশা ইউনুস সরকার যেন আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকেন। যদিও গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায়  প্রতিনিয়ত বড় রাজনৈতিক দলগুলো থেকে দ্রুত নির্বাচনের দাবি উঠছে। কিন্তু ভঙ্গুর বাংলাদেশকে গত আটমাসে যেভাবে একটি জায়গায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন ইউনুস সরকার তাতে দেশের জনগনের মধ্যে কিছুটা যেন তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠছে।

তবে সাধারণ মানুষের ন্যায় এবার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার কন্ঠেও এ নিয়ে উঠে এসেছে সতর্কবার্তা। তিনি স্রেফ জানিয়ে দিয়েছেন  আইয়ুব খান, এরশাদও বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু কোন কিছুই টিকে থাকেনি। উনার উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন এটাও একটা নির্বাচন। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে উনি ক্ষমতায় এসেছেন।’

এই বিশেষ পরিস্থিতি কত দিন স্থায়ী হবে, সেই প্রশ্ন তুলে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেছেন, ‘আইয়ুব খানও (পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক) একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এক-এগারোর যারা কুশীলব, তাঁরাও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতি থাকেনি।’

এ প্রসঙ্গে মান্না আরও বলেন, ‘আজকে যে পরিস্থিতিকে বিশেষ মনে হচ্ছে তিন মাস পরে যখন সেই পরিস্থিতি বদলে যাবে, তখন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল প্রাইজ বিজয়ী যদি সারা দেশের মানুষের কাছে সমালোচিত হন, সেটা কি দেশের জন্য কল্যাণকর হবে?’

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব প্রশ্ন তোলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না। তিনি বলেন, ‘আমি প্রশ্ন করছি, প্রফেসর ইউনূস নিজে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান? উনি কি বলেছেন? গতকালও ঐকমত্য কমিশনকে ডেকে বললেন, যত তাড়াতাড়ি পারো সংস্কার করে ফেলো, আমি জুনের মধ্যে নির্বাচন করে ফেলতে চাই।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘উনি সেখানে বললেন, আমি এই কাজের যোগ্য নই। এটা আমার কাজ নয়। আমার যে কাজ আমি সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাই। আমি জানি না কারা এই বিশদ লেখালেখি করছেন, কারা এত বেশি করে কথা বলছেন, মানুষের কানে দেবার চেষ্টা করছেন যে ভোটের দরকার নেই, ড. ইউনূসকে আরও পাঁচ বছর চাই। তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন এ রকম জনপ্রিয় নেতাদের অপ্রিয় হয়ে যেতে এক বছর সময় লাগেনি।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘যদি তাঁকে ক্ষমতায় রাখতে চান তাহলে বলেন তিনি একটা দল করুক। ভোট করুক। অত জনপ্রিয় থাকলে সবাই মিলে ভোট দেন। আবার পাঁচ বছরের জন্য উনি ক্ষমতায় আসুক। আর যদি উনি ভোট না করেন, তাহলে সবাই মিলে তাঁকে বলেন যত তাড়াতাড়ি পারেন ভালো একটা ভোট দেন, দিয়ে আপনি সম্মানের সাথেই চলে যান।’

দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার জন্য সস্তা জনপ্রিয়তার ওপর যাঁরা নৌকা ভাসানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের এই পথ থেকে সরে আসতে অনুরোধ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের যদি যোগ্যতা থাকেই, সেই যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা বিকল্প পথ তো করতে পারব। উনি এই কাজ এই সেবা অন্যভাবে দিতে পারবেন না? আগে যারা ছিল তারা তাকে ছোট করার চেষ্টা করেছে। অপমান করেছে। কিন্তু যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে…তারা যদি ড. ইউনূসের কাছে দেশসেবার জন্য বলেন, উনি কি করবেন না?’

মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় একটা ব্যর্থতা হচ্ছে এর শিক্ষা অন্যবারের মতোই সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। এতে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নাম পরিবর্তন করে ভাসানী জনশক্তি পার্টি রাখা হয়। এর চেয়ারম্যান হয়েছেন শেখ রফিকুল ইসলাম আর মহাসচিব হয়েছেন আবু ইউসুফ সেলিম।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় আসা যায় কিন্তু সেটা কখনো থাকেনি বললেন মান্না

আপডেট সময় : ১১:১৯:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ফেসবুক ওপেন করতেই বিভিন্ন আইডি থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সীমা নির্ধারণ নিয়ে নানা মতামত দেখা যায়। সবার প্রত্যাশা ইউনুস সরকার যেন আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকেন। যদিও গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায়  প্রতিনিয়ত বড় রাজনৈতিক দলগুলো থেকে দ্রুত নির্বাচনের দাবি উঠছে। কিন্তু ভঙ্গুর বাংলাদেশকে গত আটমাসে যেভাবে একটি জায়গায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন ইউনুস সরকার তাতে দেশের জনগনের মধ্যে কিছুটা যেন তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠছে।

তবে সাধারণ মানুষের ন্যায় এবার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার কন্ঠেও এ নিয়ে উঠে এসেছে সতর্কবার্তা। তিনি স্রেফ জানিয়ে দিয়েছেন  আইয়ুব খান, এরশাদও বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু কোন কিছুই টিকে থাকেনি। উনার উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন এটাও একটা নির্বাচন। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে উনি ক্ষমতায় এসেছেন।’

এই বিশেষ পরিস্থিতি কত দিন স্থায়ী হবে, সেই প্রশ্ন তুলে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেছেন, ‘আইয়ুব খানও (পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক) একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এক-এগারোর যারা কুশীলব, তাঁরাও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতি থাকেনি।’

এ প্রসঙ্গে মান্না আরও বলেন, ‘আজকে যে পরিস্থিতিকে বিশেষ মনে হচ্ছে তিন মাস পরে যখন সেই পরিস্থিতি বদলে যাবে, তখন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল প্রাইজ বিজয়ী যদি সারা দেশের মানুষের কাছে সমালোচিত হন, সেটা কি দেশের জন্য কল্যাণকর হবে?’

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব প্রশ্ন তোলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না। তিনি বলেন, ‘আমি প্রশ্ন করছি, প্রফেসর ইউনূস নিজে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান? উনি কি বলেছেন? গতকালও ঐকমত্য কমিশনকে ডেকে বললেন, যত তাড়াতাড়ি পারো সংস্কার করে ফেলো, আমি জুনের মধ্যে নির্বাচন করে ফেলতে চাই।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘উনি সেখানে বললেন, আমি এই কাজের যোগ্য নই। এটা আমার কাজ নয়। আমার যে কাজ আমি সেই জায়গায় ফিরে যেতে চাই। আমি জানি না কারা এই বিশদ লেখালেখি করছেন, কারা এত বেশি করে কথা বলছেন, মানুষের কানে দেবার চেষ্টা করছেন যে ভোটের দরকার নেই, ড. ইউনূসকে আরও পাঁচ বছর চাই। তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন এ রকম জনপ্রিয় নেতাদের অপ্রিয় হয়ে যেতে এক বছর সময় লাগেনি।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘যদি তাঁকে ক্ষমতায় রাখতে চান তাহলে বলেন তিনি একটা দল করুক। ভোট করুক। অত জনপ্রিয় থাকলে সবাই মিলে ভোট দেন। আবার পাঁচ বছরের জন্য উনি ক্ষমতায় আসুক। আর যদি উনি ভোট না করেন, তাহলে সবাই মিলে তাঁকে বলেন যত তাড়াতাড়ি পারেন ভালো একটা ভোট দেন, দিয়ে আপনি সম্মানের সাথেই চলে যান।’

দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার জন্য সস্তা জনপ্রিয়তার ওপর যাঁরা নৌকা ভাসানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের এই পথ থেকে সরে আসতে অনুরোধ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের যদি যোগ্যতা থাকেই, সেই যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা বিকল্প পথ তো করতে পারব। উনি এই কাজ এই সেবা অন্যভাবে দিতে পারবেন না? আগে যারা ছিল তারা তাকে ছোট করার চেষ্টা করেছে। অপমান করেছে। কিন্তু যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে…তারা যদি ড. ইউনূসের কাছে দেশসেবার জন্য বলেন, উনি কি করবেন না?’

মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় একটা ব্যর্থতা হচ্ছে এর শিক্ষা অন্যবারের মতোই সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি।

ভাসানী অনুসারী পরিষদের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। এতে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নাম পরিবর্তন করে ভাসানী জনশক্তি পার্টি রাখা হয়। এর চেয়ারম্যান হয়েছেন শেখ রফিকুল ইসলাম আর মহাসচিব হয়েছেন আবু ইউসুফ সেলিম।