আগামীকাল শুরু এসএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচচ্ছ ২০ লাখ শিক্ষার্থী

- আপডেট সময় : ০২:০৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
- / ৫৮ বার পড়া হয়েছে
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) থেকে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে। তবে এবার গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় এক লাখ। শুধু তা-ই নয়, বিগত পাঁচ বছরে এবারই সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ ছিল ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন এবং ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
এদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকায় আসন্ন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ১৩টি কেন্দ্র বাতিল করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। বাতিল কেন্দ্রগুলোর কোডসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনক। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে গত সাত বছরে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে। পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ২৮ লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারলে তাদেরই গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। তবে গত বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সাত বছরের শ্রেণি কার্যক্রমে প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষার স্বাভাবিক পথ থেকে ছিটকে পড়েছে। গড়ে প্রতি বছর ২ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক এসএসসিতে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার দুটি কারণ তুলে ধরে বলেন, এখানো শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বন্ধ হয়নি। উপবৃত্তি চালু করায় একসময় শিক্ষার্থী বেড়েছিল। কিন্তু উপবৃত্তির পরিমাণটা এখন এমন যে, তা দিয়ে আর অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না। আর করোনার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ধারার পড়াশোনা ছেড়েছে। একই সঙ্গে ইবতেদায়ি তথা আলিয়া ধারার মাদরাসায় শিক্ষার্থী কম ভর্তি হচ্ছে। অনেকে হাফেজি পড়ছে, কওমি ঘরানার মাদরাসায় ভর্তি হচ্ছে। ফলে সাধারণ ধারার পড়ালেখায় শিক্ষার্থী কমছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠানসংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি এবং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ৩৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী।
মন্ত্রণালয়ের একগুচ্ছ নির্দেশনা
আগামীকাল বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে এবার শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা, যা শেষ হবে (তত্ত্বীয় পরীক্ষা) ১৩ মে। এরপর ১৫ থেকে ২২ মে পর্যন্ত ব্যাবহারিক পরীক্ষা চলবে। এবারের এসএসসি পরীক্ষা হবে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা চলার তিন ঘণ্টা পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। আর কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নন, এমন কেউ চলাচল করতে পারবেন না। এসএসসি-সমমান পরীক্ষার শুরুর দিন ১০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়ানুর রহমান।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, সাধারণত কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে শুধু পরীক্ষার তিন ঘণ্টা ১৪৪ ধারা জারি থাকে। তবে কেন্দ্রভেদে এ দূরত্ব কমবেশি হতে পারে। কেন্দ্রের আশপাশে কতটুকু জায়গা ১৪৪ ধারার অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। পরীক্ষা চলার সময়ে সংশ্লিষ্টরা ছাড়া অন্য কেউ ঐ লাল পতাকা অতিক্রম করে কেন্দ্রের কাছে যেতে পারবেন না।’ এসএসসি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে আয়োজনে ঐ পরিপত্রে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঐ পরিপত্রটি সব বিভাগীয় কমিশনার, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সব জেলা প্রশাসকদের পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসরোধে কঠোর নির্দেশনা
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রফাঁস-সম্পর্কিত গুজব ও নকলরোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব অপরাধ করলে পরীক্ষা পরিচালনা নীতিমালা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।