ঢাকা ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয় : এগেদে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:২১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১২০ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

৭৯ বছর আগেও গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ কিনতে চেয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাজি হয়নি গ্রিনল্যান্ড সরকার। তারা জানিয়ে দিয়েছে গ্রিনল্যান্ড স্বাধীনতা চায়। এটি বিক্রির জন্য নয়।

প্রায় ২১ লাখ ৬৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডে বাস করেন প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ। ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে খনিজ সম্পদে ভরপুর। ভবিষ্যতের বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যে এসব খনিজের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া আর্কটিক অঞ্চলে কৌশলগত ক্রমগুরুত্বপূর্ণ নৌ বাণিজ্যপথগুলোর পাশেই এই দ্বীপের অবস্থান।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ের কথা বেশ কয়েক দফায় বলেছেন। গ্রিনল্যান্ড কিনে নিতে চান তিনি। প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আগ্রহও ফুটে উঠেছে তার কথায়। এ জন্য জোরেশোরে আলোচনা শুরু করছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিতে এগেদে ১৩ জানুয়ারি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও খনি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবে তার দেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেন এগেদে বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড স্বাধীনতা চায়। এটি বিক্রির জন্য নয়।’

বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিতে ফ্রেডেরিকসেন। ১৬ জানুয়ারি এ ফোনালাপে তিনি ট্রাম্পকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ভার গ্রিনল্যান্ডের অধিবাসীদের। তারাই সেটা নির্ধারণ করবেন।’

কোনো বিদেশি ভূখণ্ড কেনা কিংবা বলপ্রয়োগে অধিগ্রহণ করাটা একুশ শতকের বিশ্বের সঙ্গে একেবারে যায় না। যদিও গ্রিনল্যান্ডের বিষয়টি ট্রাম্পের আরেকটি আপত্তিকর পদক্ষেপের চেয়েও বেশি কিছু; ঘটনাক্রমে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার কথাও বলেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের কাছে গ্রিনল্যান্ড লোভনীয় আবাসন ব্যবসার চেয়েও বেশি কিছু, যা তার নজরে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।
ট্রাম্প এবারই প্রথম নয়, এর আগেও নিজের প্রথম মেয়াদে গ্রিনল্যান্ড নিয়ে কথা বলে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। তখন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসেন গ্রিনল্যান্ড কিনতে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে একে ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে ট্রাম্প ২০১৯ সালের নভেম্বরে পূর্বনির্ধারিত ডেনমার্ক সফর বাতিল করেন। তখন নিজের প্রথম মেয়াদের তৃতীয় বছরে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কয়েক মাসের মধ্যে করোনা মাহামারি বিশ্বজুড়ে সবকিছুকে উল্টেপাল্টে দিয়েছিল। তাই ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব তখন হালে পানি পায়নি।

এবার ক্ষমতা নেয়ার পরপরই গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। এমনকি শপথ নেয়ার আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব তিনি। পাশাপাশি নিজের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রকে গ্রিনল্যান্ড সফরে পাঠান, যদিও এটাকে অবকাশকালীন ভ্রমণ বলা হচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে আসা ডেনিশ পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। তিনি ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়ও একই হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। পরিস্থিতির ক্রমাবনতি নিয়ে ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসেনের সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানি করা ডেনমার্কের কোম্পানিগুলো।
গ্রিনল্যান্ডের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এ আগ্রহের বিষয়টি বুঝতে হলে বেশ খানিকটা সময় পেছন ফিরে তাকাতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের কিছুদিন পর ১৯৪৬ সালে ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ড কিনতে একটি প্রস্তাব সামনে এনেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। গ্রিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা নিয়ে ১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ডেনমার্কের মধ্যে সই হওয়া একটি চুক্তির আলোকে সেটি করা হয়। ওই চুক্তির ফলে গ্রিনল্যান্ডে প্রথমবারের মতো সামরিক অবস্থানের সুযোগ পান মার্কিন সেনারা। তখন জার্মান সেনারা ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন। গ্রিনল্যান্ডও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে হামলার চরম ঝুঁকিতে ছিল।

তবে ডেনমার্ক ১৯৪৬ সালে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। ডেনমার্কের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুস্তাভ রাসমুসেন বলেছিলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক ঋণী। তবু আমি মনে করি না, আমরা পুরো গ্রিনল্যান্ড দ্বীপের জন্য তাদের কাছে ঋণী।’ পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু চুক্তির আওতায় গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক বেশি প্রবেশাধিকার দিয়েছে ডেনমার্ক। কাজেই মার্কিনরা গ্রিনল্যান্ডে পুরোপুরি বহিরাগত নয়। গ্রিনল্যান্ড ও বিস্তৃত আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো অবস্থান ও স্বার্থ রয়েছে।

সূত্র : দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয় : এগেদে

আপডেট সময় : ০৭:২১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

৭৯ বছর আগেও গ্রিনল্যান্ড দ্বীপ কিনতে চেয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রাজি হয়নি গ্রিনল্যান্ড সরকার। তারা জানিয়ে দিয়েছে গ্রিনল্যান্ড স্বাধীনতা চায়। এটি বিক্রির জন্য নয়।

প্রায় ২১ লাখ ৬৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডে বাস করেন প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ। ইউরোপের দেশ ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে থাকা স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে খনিজ সম্পদে ভরপুর। ভবিষ্যতের বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যে এসব খনিজের বেশ গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া আর্কটিক অঞ্চলে কৌশলগত ক্রমগুরুত্বপূর্ণ নৌ বাণিজ্যপথগুলোর পাশেই এই দ্বীপের অবস্থান।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ের কথা বেশ কয়েক দফায় বলেছেন। গ্রিনল্যান্ড কিনে নিতে চান তিনি। প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আগ্রহও ফুটে উঠেছে তার কথায়। এ জন্য জোরেশোরে আলোচনা শুরু করছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিতে এগেদে ১৩ জানুয়ারি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও খনি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবে তার দেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেন এগেদে বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড স্বাধীনতা চায়। এটি বিক্রির জন্য নয়।’

বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিতে ফ্রেডেরিকসেন। ১৬ জানুয়ারি এ ফোনালাপে তিনি ট্রাম্পকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ভার গ্রিনল্যান্ডের অধিবাসীদের। তারাই সেটা নির্ধারণ করবেন।’

কোনো বিদেশি ভূখণ্ড কেনা কিংবা বলপ্রয়োগে অধিগ্রহণ করাটা একুশ শতকের বিশ্বের সঙ্গে একেবারে যায় না। যদিও গ্রিনল্যান্ডের বিষয়টি ট্রাম্পের আরেকটি আপত্তিকর পদক্ষেপের চেয়েও বেশি কিছু; ঘটনাক্রমে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার কথাও বলেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের কাছে গ্রিনল্যান্ড লোভনীয় আবাসন ব্যবসার চেয়েও বেশি কিছু, যা তার নজরে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।
ট্রাম্প এবারই প্রথম নয়, এর আগেও নিজের প্রথম মেয়াদে গ্রিনল্যান্ড নিয়ে কথা বলে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। তখন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসেন গ্রিনল্যান্ড কিনতে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে একে ‘হাস্যকর’ উল্লেখ করে ট্রাম্প ২০১৯ সালের নভেম্বরে পূর্বনির্ধারিত ডেনমার্ক সফর বাতিল করেন। তখন নিজের প্রথম মেয়াদের তৃতীয় বছরে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কয়েক মাসের মধ্যে করোনা মাহামারি বিশ্বজুড়ে সবকিছুকে উল্টেপাল্টে দিয়েছিল। তাই ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব তখন হালে পানি পায়নি।

এবার ক্ষমতা নেয়ার পরপরই গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। এমনকি শপথ নেয়ার আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে সরব তিনি। পাশাপাশি নিজের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রকে গ্রিনল্যান্ড সফরে পাঠান, যদিও এটাকে অবকাশকালীন ভ্রমণ বলা হচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে আসা ডেনিশ পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। তিনি ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়ও একই হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। পরিস্থিতির ক্রমাবনতি নিয়ে ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসেনের সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানি করা ডেনমার্কের কোম্পানিগুলো।
গ্রিনল্যান্ডের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এ আগ্রহের বিষয়টি বুঝতে হলে বেশ খানিকটা সময় পেছন ফিরে তাকাতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের কিছুদিন পর ১৯৪৬ সালে ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ড কিনতে একটি প্রস্তাব সামনে এনেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। গ্রিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা নিয়ে ১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ডেনমার্কের মধ্যে সই হওয়া একটি চুক্তির আলোকে সেটি করা হয়। ওই চুক্তির ফলে গ্রিনল্যান্ডে প্রথমবারের মতো সামরিক অবস্থানের সুযোগ পান মার্কিন সেনারা। তখন জার্মান সেনারা ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন। গ্রিনল্যান্ডও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে হামলার চরম ঝুঁকিতে ছিল।

তবে ডেনমার্ক ১৯৪৬ সালে চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। ডেনমার্কের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুস্তাভ রাসমুসেন বলেছিলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক ঋণী। তবু আমি মনে করি না, আমরা পুরো গ্রিনল্যান্ড দ্বীপের জন্য তাদের কাছে ঋণী।’ পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু চুক্তির আওতায় গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক বেশি প্রবেশাধিকার দিয়েছে ডেনমার্ক। কাজেই মার্কিনরা গ্রিনল্যান্ডে পুরোপুরি বহিরাগত নয়। গ্রিনল্যান্ড ও বিস্তৃত আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো অবস্থান ও স্বার্থ রয়েছে।

সূত্র : দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস