Flag - bd
Bengali
ঢাকা ১০:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কতটুকু বাড়লো

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:২৭:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১৮৩ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন নিয়ে সমালোচনা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রিজার্ভে ধীরগতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা আগের সপ্তাহেও ৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সরকার পতনের আগের মাস জুলাইয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৬ বিলিয়ন ডলার। এখন এই গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়নে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।

৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে আসন্ন এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের ফলে এটি কমে ২৩ বিলিয়নে নেমে আসতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ মানদণ্ডে বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চার দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করে। ওই হিসাব অনুযায়ী, ৩০ জুলাই ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। নতুন সরকার গঠনের পর ২১ আগস্টও রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ছিল।

পরে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধ শেষে ১২ সেপ্টেম্বর তা নেমে হয় ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। তিন সপ্তাহ পর ২ অক্টোবর তা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়নে।

অবশ্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে দুই মাসের (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) আমদানি বিল নিষ্পত্তি হচ্ছে চলতি সপ্তাহে। আকুভুক্ত ৯টি দেশের আমদানি বিল বাবদ মোট ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ হবে। এতে গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ২৩ বিলিয়ন ডলারে।

৩ নভেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্দেশিত (বিপিএম-৬) মানদণ্ড অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এ রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ থাকবে ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার—যা আইএমএফের বেঁধে দেওয়া সীমা ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে কিছুটা কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, অর্থপাচার রোধ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধিসহ নানামুখী প্রচেষ্টার ফলে রিজার্ভে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রবণতা ফিরে আসছে।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সচিবালয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ পর্যালোচনা সভায় তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মতো সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসেও প্রবাসী আয়ের গতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অক্টোবরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৪০ কোটি ডলার। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটির বেশি ডলার পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। তখন হিসাব করা হতো গ্রস হিসেবে। তবে মহামারি কোভিডের শেষে বিশ্ববাজারে জ্বালানি আর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, এরপর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বেড়ে যায় আমদানি খরচ। এর বাইরে আমদানির আড়ালে অর্থপাচার বেড়ে যাওয়ায় কমতে থাকে রিজার্ভ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, অক্টোবরেও প্রবাসী আয় ঊর্ধ্বমুখী ছিল, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কতটুকু বাড়লো

আপডেট সময় : ০২:২৭:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন নিয়ে সমালোচনা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রিজার্ভে ধীরগতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা আগের সপ্তাহেও ৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সরকার পতনের আগের মাস জুলাইয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৬ বিলিয়ন ডলার। এখন এই গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়নে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।

৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে আসন্ন এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের ফলে এটি কমে ২৩ বিলিয়নে নেমে আসতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ মানদণ্ডে বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চার দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করে। ওই হিসাব অনুযায়ী, ৩০ জুলাই ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। নতুন সরকার গঠনের পর ২১ আগস্টও রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ছিল।

পরে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধ শেষে ১২ সেপ্টেম্বর তা নেমে হয় ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। তিন সপ্তাহ পর ২ অক্টোবর তা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়নে।

অবশ্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে দুই মাসের (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) আমদানি বিল নিষ্পত্তি হচ্ছে চলতি সপ্তাহে। আকুভুক্ত ৯টি দেশের আমদানি বিল বাবদ মোট ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ হবে। এতে গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ২৩ বিলিয়ন ডলারে।

৩ নভেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নির্দেশিত (বিপিএম-৬) মানদণ্ড অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এ রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ থাকবে ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার—যা আইএমএফের বেঁধে দেওয়া সীমা ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে কিছুটা কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, অর্থপাচার রোধ, রেমিট্যান্স বৃদ্ধিসহ নানামুখী প্রচেষ্টার ফলে রিজার্ভে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রবণতা ফিরে আসছে।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সচিবালয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ পর্যালোচনা সভায় তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মতো সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসেও প্রবাসী আয়ের গতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অক্টোবরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৪০ কোটি ডলার। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটির বেশি ডলার পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। তখন হিসাব করা হতো গ্রস হিসেবে। তবে মহামারি কোভিডের শেষে বিশ্ববাজারে জ্বালানি আর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, এরপর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বেড়ে যায় আমদানি খরচ। এর বাইরে আমদানির আড়ালে অর্থপাচার বেড়ে যাওয়ায় কমতে থাকে রিজার্ভ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, অক্টোবরেও প্রবাসী আয় ঊর্ধ্বমুখী ছিল, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।